অনুযুগের প্রতিষ্ঠা দিবস পালনে নাটক অনুযুগ প্রযোজনা "যাত্রী"
বব্রুবাহন জাহাজের মাল্লারা প্রায় চারমাস কর্মহীন। অভাব যখন নিত্যসঙ্গী, তখন হঠাৎ পন্ডিত ধর্মরাজ শাস্ত্রী আসেন জাহাজ ভাড়া করতে পুণ্যতীর্থ চারণদ্বীপ যাত্রার অভিপ্রায়ে। শর্ত একটাই - কোন বিধর্মী মোল্লা জাহাজে থাকবে না। অভাবের তাড়নায় কাপ্তেন চন্দ্রমৌলী রাজি হয়ে যান এই শর্তে। মাল্লাদের অনুরোধ উপেক্ষা করে তথাকথিত উচ্চকূলশীল হিন্দু যাত্রীদের নিয়ে দ্বিতীয় নৌপরিচালক ইব্রাহিমকে ছাড়াই বব্রুবাহন পাড়ি দেয় সমুদ্রে। উচ্চকূলশীল বর্ণ হিন্দু যাত্রীদের চোখে জাহাজের মাল্লারা ম্লেচ্ছ, অচ্ছুৎ - তাই চাপা একটা অসন্তোষ সাথে করেই এগোতে থাকে জাহাজ।
মাঝ সমুদ্রে হঠাৎ দেখা যায় কাঠের পাটাতনে ভাসমান একটি মানুষকে। যাত্রীরা অজ্ঞাতকুলশীল মানুষটিকে জাহাজে তুলতে বাধা দেন। কিন্তু নাবিকের কর্তব্য অনুসারে কাপ্তেন তাকে জাহাজে তুলতে বলেন। তোলার পর জানাজায় লোকটি মুসলমান - নাম সুলেমান। ক্ষোভে ফেটে পড়ে যাত্রীরা, লোকটিকে সমুদ্রবক্ষে নিক্ষেপ করার দাবী জানায়। কাপ্তেন নিজের নাবিক-ধর্ম লঙ্ঘন না করায়, শুরু হয় শাস্ত্রীজির সাথে বাকবিতন্ডা।
হঠাৎই কাপ্তেন স্কার্ভি রোগে আক্রান্ত হয়ে পড়েন, জাহাজ হয়ে পড়ে নৌপরিচালক বিহীন। এদিকে বাতাসের গতিবেগ বাড়তে থাকে - শুরু হয় প্রলয়ংকর ঝড়। সেই তান্ডবের মধ্যে পরে নৌপরিচালকহীন জাহাজের সবাই প্রহর গুনতে থেকে আগতপ্রায় শেষের সেই ক্ষণের। এ সময় যেন 'যাকে রাখো সেই রাখে' প্রবাদটিকে সত্যি করে তুলতে দেবদূতের মত এগিয়ে আসে সুলেমান। জানা যায় সে ছিল ডুবে যাওয়া জাহাজ 'ভদ্রা'-র নৌপরিচালক। সুলেমানের দক্ষতায় ও মাল্লাদের অক্লান্ত প্রচেষ্টায় ঝড়ের হাত থেকে রক্ষা পায় যাত্রীরা।
ঝড় কেটে গিয়ে নতুন আলো ছড়িয়ে পড়ে। সেই আলোয় ধুয়ে যায় যাত্রীদের যুগ যুগ সঞ্চিত জাতপাতের কুসংস্কার, সংকীর্ণতা, ধর্মান্ধতা। তাঁরা বুকে টেনে নেন মাল্লাদের। অদূরে দেখা যায় চারণদ্বীপ। কিন্তু শাস্ত্রীজি নির্দেশ দেন জাহাজ ঘোরাতে, কারন যে মোক্ষলাভের আশায় তিনি চারণদ্বীপ যাত্রা করেছিলেন, তা তিনি লাভ করেছেন ওই ঝড়ের মুহূর্তে। জাতপাতের হাঁড়িকাঠে মানুষকে বলি দিয়ে চারণভূমি স্পর্শ করলেই যে মোক্ষলাভ হয় না, তা তিনি উপলব্ধি করেছেন। তাই তিনি ফিরতে চান মাটিতে, তাঁর জীবনে - মানুষ মানুষের জন্য এই ধর্মকে লালন করার উদ্দেশ্যে।
নাটক,সুর,পরিচালনা - সজল চক্রবর্তী
চরিত্রলিপি
চন্দ্রমৌলী- অরূপ পাল
নীলকান্ত - বিভাস নাগ
জনার্দন - সঞ্জয় দাশ
কীর্তি - সৌভিক কুন্ডু
রন্তু - অনুপম ভট্টাচার্য
পিরুমল - সৃজয় দাশ
বংশী - সৃঞ্জয় দাশ
পবন - শ্রেয়াংশ চক্রবর্তী
সুলেমান - অরিন্দম ভট্টাচার্য
ইব্রাহিম - শুভাশিস বাগ
ধর্মরাজ শাস্ত্রী - সুমনন ভট্টাচার্য
মারিয়াপ্পা- শোভন চট্টোপাধ্যায়
ভূষণ চতুর্বেদী - সাত্যকি চক্রবর্তী
তারাময়ী - শিপ্রা পোদ্দার
রাধারানী - সুমনা মুখোপাধ্যায়
পার্বতী - মিঠু বিশ্বাস ঘোষ
শব্দ প্রক্ষেপণ- সুস্মিত নাগ
আলোক নিয়ন্ত্রণ -পিউ